বর্তমানে বাগানে থোকায় থোকায় কুল ও লেবুর ফলন ঝুলছে। সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে শীতকালীন সবজি। রোদের আলোয় ফুলকপির শুভ্র হাসি আর ধনিয়ার সুঘ্রাণে মোহিত চারপাশ। বাগানটি দেখতে ও ফল কিনতে প্রতিদিনই স্থানীয়রা ভিড় করছেন। আগামী বছর এখান থেকে দেড় কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাগানটি এখন অন্যদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮০০ শতক জমিতে বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। বাগানের চারপাশে উঁচু করে মাটির বাঁধ দেয়া। ভেতরে অন্তত ১৫ কৃষি শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ কোদাল দিয়ে মাটি নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউবা গাছের গোড়ায় পানির সেচ ও সার দেয়ায় ব্যস্ত। বাগানের মাঝে রয়েছে পুকুর। আর চারপাশে খালের মতো করে নালা করে দেয়া হয়েছে, যেন বাগানে পানি জমে না থাকে। বাগানের কুল গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লাল-সাদা কুল, রয়েছে লেবু। মাঝে মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কুমড়াও রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে অনাবাদী শত শত একর জমিতে সূর্যমুখীর হাসি
আরও পড়ুন: করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান গদখালীর ফুল চাষিরা
বাগানের মালিক প্রবাসফেরত ইউনুস জানান, তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষিকাজ করতেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে দেখেন বাড়ির পাশে বড় জলাভূমি রয়েছে। পরিকল্পনা করলেন পতিত জমিগুলো লিজ নেবেন। নিজের জমানো অর্থ দিয়ে লিজসহ ১৮০০ শতক জমিতে গড়ে তুললেন এ ফল ও সবজি বাগান। ইউটিউবে ভিডিও দেখে কুল চাষ পদ্ধতি শিখে গত বছর বাগানে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী জাতের ২৫০০ কুল গাছ রোপণ করেন। এ বছর প্রথম ফলন এসেছে। পাশাপাশি চায়না জাতের সাত হাজার বিচিহীন লেবু গাছ রোপণ করেছেন।
গাছ কেনা ও কৃষি শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরিসহ গত এক বছরে অন্তত ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন ইউনুস। বাগান করতে গিয়ে এত টাকা বিনিয়োগ করাতে পরিবার ও প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। ছেলেরা নিয়মিত বাগানে বাবার কাজে সহযোগিতা করে।
ইউনুস বলেন, ‘এবার মাত্র প্রথমবারের মতো আমার বাগানে ফল আসল। এ পর্যন্ত এক লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। আগামী রমজানে লেবু বিক্রি করব। সে লক্ষে বাগানে পরিচর্যা চলছে। তবে বাগানে আরও অন্তত ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। এ জন্য ঋণের আবেদন করেছি। তবে পাচ্ছি না। কোনো ব্যাংকই আমাকে ৭-৮ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ধান ও আম আবাদের পরিবর্তে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
আরও পড়ুন: জমির উর্বরতা ফেরাতে আবারও জৈব সারে ঝুঁকছেন চৌগাছার কৃষকরা
আরও পড়ুন: স্কোয়াশ চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টা মাসুদের
ইউনুস জানান, যদি তিনি চাহিদা মতো তার বাগানে বিনিয়োগ করতে পারেন তাহলে কুল, লেবু ও সবজি মিলিয়ে আগামী বছর অন্তত দেড় কোটি টাকার ফল ও সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
বাগানটির বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহীদুল হক বলেন, ‘ইউনুসের বাগানের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করলে তার ঋণের ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।’